ডায়েট নিয়ে আমরা অনেকেই অনেক ভুল ধারণা পোষণ করে চলি, সেইকারণে অনেক সময় নানা রকম রোগ ব্যাধির শিকার হতে হয় আমাদের। নিজেদের বয়স,ওজন,উচ্চতা বুঝে যদি সঠিক ডায়েট চার্ট ফলো করা যায় তাহলে কোনোরকম সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ ছাড়াই আমরা সুস্থ্য এবং সুন্দর জীবনযাপন করতে সক্ষম হবো। Spark.Live এর বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান ভাস্বতী ব্যানার্জী চ্যাটার্জী দিয়েছেন ডায়েট সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উপযুক্ত উত্তর। আসুন দেখে নেওয়া যাক।
১) Pcos- সমস্যায় কি ধরণের ডায়েট উপযুক্ত?

উত্তর- বর্তমান দিনে Pcos একটি সাধারণ সমস্যা, এটি মূলত হরমোনের অসামঞ্জস্যতার জন্য হয়ে থাকে এবং ক্রমাগত অত্যাধিক মাত্রায় তৈলাক্ত খাবার, ভাজা জাতীয় খাবার ও ফাস্ট ফুডও এর অন্যতম মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Pcos- এর উপযুক্ত ডায়েট:-
Pcos- এর খাবার নির্বাচন করার সময় আমাদের বিশেষ কিছু জিনিসের উপর নজর রাখতে হবে, যেমন-
- উন্নত গুণগতমান এবং উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট রোজকার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে,-সুষম আহার গ্রহণ করতে হবে,রোজকার খাবারের সময় নির্দিষ্ট করতে হবে এবং দুটি মিলের মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান রাখা যাবেনা,
- যেসমস্ত খাবারের পুষ্টিগত ম্যান উচ্চমানের, সেইসব খাবার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে এবং দেখতে হবে যাতে কোনোভাবেই শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেলের অভাব না ঘটে। পর্যাপ্ত পরিমানে জল খেতে হবে।
- উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং উচ্চ গুণগত মানের প্রোটিন রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়,
- যে ধরণের মাছে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি পরিমানে আছে, সেগুলিকে রোজের ডায়েটে রাখতে হবে,
- আমন্ড,আখরোট এগুলিও খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে,
- তৈলাক্ত খাবার, ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে,
- চিনি,মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
-যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক উৎস যেতে তৈরী খাবার
-আনপ্রসেস্ড ফুড
-ফ্যাটি ফিশ- স্যালমন,টুনা, ম্যাকারেল, সারভিন ইত্যাদি
-ব্রকোলি,সবুজ শাক সবজি
-বিনস, ডাল জাতীয় শস্য
-অ্যাভোকাডো, নারকেল, অলিভ অয়েল
-হলুদ(কাঁচা), ডাচিনি, লবঙ্গ
-আখরোট,আমন্ড -চিকেন, ডিমের সাদা অংশ
-টোম্যাটো
-বেরিস,স্প্রাউটস,ব্লুবেরিস্ট্রবেরি
- প্রসেসড ফুড- জ্যাম,জেলি,সস,আচার
- সিম্পল কার্বোহাইড্রেট- চিনি, মধু,মিষ্টি,সাদা পাউরুটি,কার্বোহাইড্রেট পানিও, লজেন্স,চকোলেট
- রেড মিট,ডিমের কুসুম
- ভাজা জাতীয় খাবার বা অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার
-অ্যালকোহল
২) জাঙ্ক ফুড থেকে শিশুদের দূরে রাখার জন্য কি ধরণের খাবার দেওয়া যেতে পারে?

উত্তর- জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড হল এমন এক ধরণের ফুড, যেখানে পুষ্টিগত মমনখুব কম থাকে, কিন্তু হাই ক্যালোরি, হয় ফ্যাটযুক্ত হয়। সেইকারণে এই ধরণের খাবার খাওয়ার ফলে শিশুদের মোটা হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। কিন্তু কোনো পুষ্টি হয়না।
শিশুদের জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে রাখতে হলে আমাদের বিশেষ কিছু বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে, সেগুলো হল-
- শিশুকে একদম ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে কোনটা পুষ্টিকর খাবার আর কোনটা জাঙ্ক ফুড এবং অস্বাস্থকর খাবার,
- শিশুকে সবার সঙ্গে খেতে বসিয়ে নিজের হাতে খাবার অভ্যেস করা দরকার,
– শিশুকে একটু সময় ধরে খাওয়াতে হবে,
যে ধরণের খাবার আমরা শিশুকে দিতে পারি :-
-শিশুরা খাবারের মধ্যে বৈচিন্ত্র খোঁজে, একই ধরণের খাবার শিশুকে রোজ দেওয়া উচিত নয়। এতে শিশুদের খাবার প্রতি অনিচ্ছা আরও বেড়ে যায়। তাই একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরিবর্তন করে খাবার দেওয়া উচিত। যেমন ধরুন কাল বিকেলে শিশুকে দুধ রুটি দিয়ে থাকেন, তাহলে আজ রুটির পরিবর্তে দুধ কর্নফ্লেক্স দিতে পারেন। এক্ষেত্রে দেখতে হবে যাতে পুষ্টির পরিমানে একই থাকে শুধু রুচির পরিবর্তন হয়।
- শিশুরা একটু কালারফুল খাবার দেখলে তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, তাই নানারকম সবজি দিয়ে স্যালাড স্টু এগুলো দেওয়া যেতে পারে,
- একইভাবে যদি রোজ ভাত দলের পরিবর্তে একটু চলে ডালে খিচুড়ি বানিয়ে দেওয়া যায় এবং তাতে সব সবজি দেওয়া যায়, তাহলে সেটা অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয় এবং সুস্বাদুও হয়ে থাকে।
- শিশুরা দুধ না খেতে চাইলে বা দুধে এলাৰ্জি থাকলে তাকে সোয়া মিল্কও খাওয়ানো যেতে পারে বা দই, ছানা ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।
৩) শুধুমাত্র ডায়েট করে ওজন কমানো কতটা যুক্তি সঙ্গত?

উত্তর- এক্ষেত্রে প্রথমেই বলে রাখি যে, যেকোনো মানুষের আদর্শ ওজন তার উচ্চতার উপর নির্ভর করে। যদি কোনো একজনের ওজন তার আদর্শ ওজনের থেকে অনেকটা বেশি হয়, সেক্ষেত্রে তার ওজন কমানো অত্যন্ত প্রয়োজন।
সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৭০% ডায়েট ৩০% শারীরিক কার্যকারিতার কথা বলা হয়ে থাকে। ওজন কমানোর জন্য খাবারের পরিমান কমিয়ে দেওয়া হয় ও সমস্ত খাবার যাতে শরীরে ডাইজেশন,অবসর্প্শন ও মেটাবোলাইস হয় সেইজন্যই শারীরিক অনুশীলনের কথা বলা হয় রোগীকে। যদি কোনো শারীরিক কারণে এক্সসারসাইস করতে না পারেন বা অসুস্থ থাকেন, সেক্ষেত্রে তাকে তার মেটাবলিসম রেট অনুযায়ী নিম্ন ক্যালোরিসম্পন্ন খাবার দিয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করা হয়। আসলে নিয়মিত শারীরিক এক্সসারসাইস করলে শরীরের কোষগুলো সঠিক পুষ্টির কারণে সচল ও সবল থাকে এবং শরীরের সঞ্চিত মেদগুলিকে ভেঙে শরীরে ক্যালোরি দেয়, তাই শুধুমাত্র ওজন কমানোই নয় , নিজেদের সুস্থ ও সবল রাখতেও দিনে অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট এক্সসারসাইস করার করা বলা হয় রোগীদের।
৪) ওভারওয়েট ও ওবেসিটির মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর- একজন ব্যক্তির যা আদর্শ ওজন, তার থেকে ১০% – ২০% ওজন বেশি হলে ঐ ব্যক্তিকে ওভারওয়েট বা অতি ওজন বিশিষ্ট বলা যাবে এবং ওজন আদর্শ ওজনের থেকে ২০& বা তারবেশি হলে ঐ ব্যক্তিকে মেদবহুল বা ওবেস বলা যাবে।
সাধারণত ওভারওয়েট ও ওবেসিটি হল অতিরিক্ত পুষ্টিজনিত সমস্যা। দেহের এডিপোস টিস্যুতে অতিরিক্ত ফ্যাট জমলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তার জন্যই ওভারওয়েট ও ওবেসিটি হয়ে থাকে। তবে শুধুমাত্র দেহের ওজন পরিমাপ করে কোনো মানুষকে/ব্যক্তিকে ওভারওয়েট বলা ঠিক নয়। কারণ একজন সুঠাম পেশীবহুল ব্যক্তির ওজন বেশি হলেও সে ওবেস নাও হতে পারে। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও একজন স্থূলকায় ব্যক্তির ওজন স্বাভাবিকভাবে বেশিই হয়। প্রত্যেক মানুষের উচ্চতা,বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী তার আদর্শ ওজন আলাদা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সেই আদর্শ ওজনকে বর্তমান ওজনের সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে ওই ব্যক্তি ওভারওয়েট বা ওবেস কিনা। এইক্ষেত্রে আমরা বডি মাস ইনডেক্স বা BMI-এর ভিত্তিতে এটি জানতে পারি। BMI-এর বিভিন্ন মান আছে, সেই মান অনুযায়ী যেকোনো ব্যক্তির সঠিক ওজন জানা যায়।
৫) ডায়েট নিয়ে কিছু সচেতনতার বার্তা যদি দেন?

উত্তর- প্রত্যেকটা মানুষের উচিত ডায়েট নিয়ে সচেতন থাকা। সঠিক পুষ্টি শরীর গঠন করে, যদি পুষ্টির মাত্রা সঠিক না হয়, তাহলেই বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত হবে শরীরে। আমরা ছোট থেকেই জেনে এসেছি যে ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’, যদি আমরা নিজেদের স্বাস্থকেই সঠিক পুষ্টি দিতে না পারি, তাহলে নিজের সম্পদকেই আমরা হারাবো।
বর্তমান পরিস্থিতি খুবই কঠিন, এইসময় স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং ডায়েট দুটোর দিকেই সমানভাবে সজোরে রাখতে হবে, এই দুটোই সমান প্রয়োজনীয়। এখন খুব একটা দরকার ছাড়া মানুষ বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেনা, আর বাড়িতে বসে থাকার কারণে শারীরিক কাজকর্ম কমেছে এবং খাওয়াদাওয়ার মাত্রা বাড়ায় ওজনও বেড়েছে অনেকেরই। কিন্তু বহু মানুষ আছেন যারা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ না নিয়ে ইন্টারনেট দেখে অথবা লোকমুখে শুনে বা কিছু লোকের থেকে ভুলভাল ইনফরমেশন নিয়ে সেইভাবে ডায়েট করে বিপদে পড়ছেন। স্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন কোমর পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন অনেকে। বর্তমানে এরকম ঘটনা খুবই সাধারণ, তাই অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের থেকে সঠিক ভাবে জানুন, কারণ প্রতিটি মানুষের শারীরিক গঠন অনুযায়ী, মেটাবলিসম অনুযায়ী তার ক্যালোরির চাহিদা আলাদা।
রোজকার জীবনে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলুন, যেমন ফল, শাকসবজি,প্রোটিনজাতীয় খাবার- ডাল,মাছ,মাংস, ডিম,দুধ, দই বা দুধ থেকে বানানো খাবার এগুলি নিয়মিত খাবার চেষ্টা করুন।
ডায়েটিশিয়ান এবং সার্টিফাইড ডায়াবেটিস এডুকেটর ভাস্বতী ব্যানার্জী চ্যাটার্জী
ভাস্বতী ব্যানার্জী চ্যাটার্জী একজন স্বনামধন্য ডায়েটিশিয়ান এবং সার্টিফাইড ডায়াবেটিস এডুকেটর, তিনি ক্লিনিকাল নিউট্রিশন এবং ডায়াটেটিক্স নিয়ে ২০১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এস সি করেন এবং ২০১৫ সালে মাস্টার ডিগ্রি কমপ্লিট করেন IIEST শিবপুর থেকে। বর্তমানে তিনি অ্যাপোলো সুগার ক্লিনিকে একজন ডায়েটিশিয়ান এবং ডায়াবেটিস এডুকেটর হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। তাছাড়া ওনার নিজস্ব চেম্বারেও উনি প্র্যাক্টিস করে চলছেন। বহু মানুষ তার দেওয়া ডায়েট চার্ট ফলো করে ভীষণভাবে উপকৃত হয়েছেন এবং নানান জায়গায় তার সম্পর্কে খুব ভালো ভালো ফিডব্যাক দিয়ে চলছেন। বর্তমানে ডায়েটিশিয়ান ভাস্বতী Spark.Live এ যুক্ত হয়েছেন, যার সুবাদে আপনারা সকলেই ওনার সঙ্গে অনলাইন কন্সালটেশন করে ডায়েটের সমস্যার সহজ সমাধান করে নিতে পারবেন।
Spark.Live এ ডায়েটিশিয়ান এবং সার্টিফাইড ডায়াবেটিস এডুকেটর ভাস্বতী ব্যানার্জী চ্যাটার্জীর সঙ্গে অনলাইন কন্সালটেশনের জন্যে লিংকটিতে ক্লিক করুন-https://spark.live/consult/diet-and-nutrition-to-burn-calories-with-dietitian-bhaswati-banerjee-chatterjee-bangla