বর্তমানে আমরা অনেকেই মাতৃ ভাষার গুরুত্ব ভুলতে বসেছি, অনেকেই আমরা মনে করি বাংলা ভাষা শিখে বোধ হয় জীবনে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একেবারেই অসম্ভব। আপনাদের এই ধরণের কিছু প্রশ্নের উপযুক্ত উত্তর নিয়ে Spark.Live-এ হাজির হয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষিকা মিতা দাস। আসুন একটু দেখে নেওয়া যাক ওনার মন্তব্য।
১) আপনার মতে বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষা পড়ার উপর জোর কি ক্রমশ কমে যাচ্ছে?
উত্তর- না একদমই নয়। কারণ মা এবং মাতৃভাষা সমতুল্য।বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার সহজ। পৃথিবীতে সব উন্নত জাতিই তাদের শিক্ষা সংস্কৃতি শিল্পপ্রসারে মাতৃভাষাকেই গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলা তথা আমাদের নিজস্ব ভাষাকে অবহেলা করার অর্থ নিজের পদযুগলকে অবহেলা করে অপরের কাঁধে ভর দিয়ে চলা। রবীন্দ্রনাথ মাতৃভাষাকে মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বাংলা ব্যতীত অন্য ভাষা শেখ যেতেই পারে সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের যাদের মাতৃভাষা বাংলা, তাদের কাছে বাংলা ভাষা শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো। বাংলা ভাষা জ্ঞানের ভাষা, চেতনার ভাষা ও মুক্তির ভাষা। বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা এখন অনেক বেশি সচেতন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী বাংলায় অনার্স এমএ পড়ছে। বাংলা সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, বাংলা ভাষায় লেখা প্রচুর লিটল ম্যাগাজিনের কাজ চলছে। ননতুন নতুন প্রতিভার জন্ম হচ্ছে, তাই বাংলা ভাষার উপর জোর কমে যাচ্ছে একথা একেবারেই ঠিক নয়।
২) সংস্কৃত এবং হিন্দি এই দুই ভাষার মধ্যে মিল এবং অমিল ঠিক কোথায় যদি বুঝিয়ে বলেন?

উত্তর- সংস্কৃত ভাষা হল প্রাচীন ধ্রুপদী ভাষা। ভারতবর্ষের বহু ভাষার উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত ভাষা থেকে, তাই সংস্কৃতকে বলা হয় সকল ভাষার জননী স্বরূপা। প্রাচীন মুনি-ঋষিদের দ্বারা সংস্কৃত ভাষার সংস্কার হয়েছিল। তাই এই ভাষাটি অত্যন্ত সুন্দর,শুদ্ধ,অভিজাত এবং শ্রুতিমধুর। ভারতবর্ষের বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থগুলি যেমন- হিন্দু,বৌদ্ধ,জৈন,বৈষ্ণবদের ধর্মমূলক গ্রন্থগুলি সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছে। ভারতের প্রায় সকল ভাষারই শিকড় সংস্কৃত ভাষার মধ্যে নিহিত আছে।
সারা ভারতবর্ষে হিন্দি ভাষার ব্যাপক প্রচলন থাকলেও সংস্কৃত ভাষা থেকেই আসলে হিন্দি ভাষার জন্ম হয়েছে। দিল্লি,উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড এবং উত্তর ভারতের কিছু অংশের মানুষ বিশুদ্ধ হিন্দি বা ব্যাকরণযুক্ত হিন্দি ব্যবহার করেন।
সংস্কৃত ও হিন্দি ভাষার অক্ষরগুলি দেখার দিক থেকে মিল থাকলেও, তুলনামূলকভাবে হিন্দি ভাষার ব্যাকরণ এবং বাক্যন্টন সহজ সাধারণ শব্দ ব্যবহার করে বাক্য গঠন করা যায় এবং জুচ্চারণের ব্যাপারেও তেমন কোনো বাধা নিষেধ নেই।
৩) বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশুনো করে ভবিষ্যতে কি কি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব?

উত্তর- বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশুনো করে অনেকগুলো দিকেই কেরিয়ার তৈরী করা সম্ভব। যারা বাংলা মিডিয়ামে শিক্ষকতা করতে চান, অধ্যাপনা করতে চান তাদের বাংলা ভাষা বিষয়ে অবশ্যই ঞ্জন থাকা আবশ্যক। কারণ বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলা ভাষাতেই কথা বলতে বা ক্লাস করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এছাড়াও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষার বিশেষ প্রয়োজন। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট এই দুটো মিডিয়ার ক্ষেত্রেই কেরিয়ার গড়তে হলে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডার,শব্দ চয়ন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে।
বাচিক শিল্পী হতে চাইলে,থিয়েটার নিয়ে কাজ করতে চাইলে,সংগীত শিল্পী হিসেবে কাজ করতে চাইলে,উপস্থাপক হতে চাইলেও বাংলায় ভালো জ্ঞান থাকতেই হবে। সাহিত্যকে ভালোবাসলে নিজের প্রতিভাকে প্রকাশের জন্যও বাংলা তথা মাতৃভাষা জানা প্রয়োজন।
৪) বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র ছাত্রীরা কিভাবে নিজেদের স্পোকন ইংলিশ-এর ক্ষেত্রে তৈরী করবে যদি বলেন?

উত্তর- বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র-ছাত্রী মানেই মেধার দিক থেকে পিছিয়ে আছে এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। বহু মেধাবী শিক্ষার্থী বাংলা মিডিয়ামে পড়াশুনো করছে, ইংলিশ একটি সহজ ভাষা চাইলেই সেই ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠতে পারবে।
প্রথমেই বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র-ছাত্রীদের ইংলিশ বলার মধ্যে যে জড়োতা সেটা কাটিয়ে উঠতে হবে। উচ্চারণ,বাচন ভঙ্গি,থেমে থেমে বলা এসব বিষয়ে কে কি ভাবনা তা না ভেবে নিজের শেখার চেষ্টা বজায় রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত- অনেকেই ইংরেজি ভাষাকে সমুদ্রের মতো মনে করে, তা কিন্তু নয়। অন্যান্য বিষয়ের মতো এই বিষয়েও কয়েকটি বেসিক জ্ঞান তৈরী করতে হবে। ডিকশনারিতে প্রচুর শব্দ থাকে তার মধ্যে থেকে প্রতিদিন ব্যবহার করা মতো কিছু শব্দ শিখে নিতে হবে। ছোট ছোট পা ফেলে এগোলেও সহজে ইংলিশ শিখে ফেলা সম্ভব হবে।
তৃতীয়ত- যেকোনো বিষয়ের মতো ইংলিশ শেখার ক্ষেত্রেও ধৈর্যশীল হতে হবে, এক দুদিন প্রাকটিস করার পর বন্ধ করে দিলে হবেনা, অনুশীলন করে যেতে হবে।
চতুর্থত- ইংলিশ শেখার জন্য সব থেকে এফেক্টিভ বিষয় হল স্পিকিং। আমরা যখুন প্রথম কথা বলতে শিখি তখন একটা দুটো শব্দ বলার চেষ্টা করি। তারপর ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ বাক্য বলতে পারি,এক্ষেত্রেও একই পদ্ধতিতে ছোট ছোট শব্দ শেখ থেকে কমপ্লিট সেনটেন্স তৈরির দিকে এগোতে হবে।
পঞ্চমত- বন্ধু বা অন্য কারোর সঙ্গে ইংলিশ ছোট ছোট বাক্য দিয়ে কথা বলা শুরু করতে হবে। ভুল হতেই পারে তাতে লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই, ভুল সংশোধন করে আবার প্রাকটিস করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষক বা ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে হবে, নানা অ্যাপ ফোনে ইনস্টল করে তার সাহায্যে ইংলিশ সোনা বা বলা প্রাকটিস করা যেতে পারে।
ষষ্ঠত- নতুন কোনো ইংলিশ শব্দ শুনলেই তার মানে ডিকশেনারী দেখে জেনে নিতে হবে। এছাড়াও ইংলিশ বই, পত্রিকা,নিউজপেপার নিয়মিত পড়তে হবে। সবথেকে জরুরি শেখার প্রকৃত ইচ্ছে , ইচ্ছেশক্তি দিয়েই যেকোনো দুর্গমকে জয় করা সম্ভব।
৫) মাতৃ ভাষাতে দক্ষ হওয়া কতখানি গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর- মাতৃভাষা একটি সমাজবদ্ধ পদ। যার অর্থ-মায়ের ভাষা বা মায়ের বলা ভাষা। মাতৃভাষা জাতিকে শৈশব থেকে যৌবনে উন্নীত করে। মাতৃভাষা প্রতিটি জাতীয় কাছেই জীবন ধারণ ও অস্তিত্ব রক্ষার মহামন্ত্র। ইংরেজ,রাশিয়ান এমনকি প্রাচ্যের জাপানীরাও মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসারের মধ্যে দিয়েই বিজ্ঞান,সাহিত্য,শিল্প ও সাধনার জগতে উন্নতমস্তকে বিচরণ করছে। শিশু যে ভাষার পরিমণ্ডলের মধ্যে বেড়ে ওঠে তার প্রথম ভাষাজ্ঞান ও শিক্ষালাভ যদি সেই ভাষাতেই না হয় তাহলে শিক্ষা কোনোদিনই তার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবেনা।
শিক্ষিকা মিতা দাস (সংস্কৃত ও বাংলা)
দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে শিক্ষিকা মিতা দাস দক্ষতার সঙ্গে ছাত্র ছাত্রীদের বাংলা এবং সংস্কৃত পড়িয়ে চলেছেন, ক্লাস ৫ থেকে ক্লাস ১২ পর্যন্ত তিনি সংস্কৃত ও বাংলা পড়ান। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সকলেই অনলাইন প্লাটফর্মের উপর ভরসা করি, তাই তিনি যুক্ত হয়েছেন Spark.Live এ। আপনারা সকলেই নিজের ছেলে-মেয়েকে বাড়িতে রেখে তাদের সুন্দর ভাবে বাংলা বিষয়ে তৈরী করে তুলতে পারেন, শিক্ষিকা মিতা দাসের সহায়তায়।
Spark.Live-এ বাংলা এবং সংস্কৃত শিক্ষিকা মিতা দাসের সঙ্গে অনলাইন সেশনের জন্যে লিংকটিতে ক্লিক করুন-https://spark.live/consult/learn-bengali-and-sanskrit-with-teacher-mita-das-bangla
