ডায়েট করা মানেই হয়তো আমরা ভাবি নানারকম নিত্য নতুন জিনিসপত্র প্রয়োজন হবে, কিন্তু তা একেবারেই নয়। আপনার বাড়িতে মজুত জিনিসপত্র দিয়েই সুন্দর ভাবে নিজেদের খাদ্যতালিকা তৈরী করে নিতে পারেন যার ফলে আপনার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও বাড়বে এবং অতিরিক্ত ওজনও নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। তাই আর দেরি না করে দেখে নিন কিছু বিশেষ প্রশ্নের উত্তর।
1) রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কি ধরণের ডায়েট করা উচিত?

উত্তর- রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোনো আলাদা রকমের ডায়েট মেনে চলার দরকার পড়েনা, শুধু সামান্য কিছু পরিবর্তন করা প্রয়োজন যেমন-
শাক সবজি, ফল,ডাল জাতীয় খাদ্য বেশি পরিমানে রাখা প্রয়োজন।
হাই প্রোটিন কিন্তু প্লান্ট বেসড ফুড প্রোডাক্ট যেমন রাজমা,সোয়াবিন, মাখানো এগুলো পরিমানে বেশি খেলে ভালো।
ডায়েটে প্রতিদিন কাঁচা হলুদ,তুলসী পাতা,আমলকি,কারি পাতা,ধোনে পাতা, নিম পাতা,পুদিনা পাতা,মধু এগুলো রাখা খুবই প্রয়োজনীয়।
সব রকমের মশলাপাতি যেমন জিরে,ধোনে,এলাচ,দারচিনি,তেজ পাতা,গোলমরিচ,আদা, রসুন,পিঁয়াজ প্রতিদিনের খাদ্যের মধ্যে থাকা প্রয়োজন অল্প পরিমানে হলেও।
চিনি,নুন,ময়দা জাতীয় খাদ্য বাদ দিতে হবে বা কম খেলেই ভালো। তার পরিবর্তে গুড়,মধু,হোল হুইট আটা বা মাল্টিগ্রেইন আটা, ওটস, ফ্লেক্সসিডস,চিয়া সিড্স এগুলো রাখতে হবে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন মুসাম্বি, কমলা লেবু বা যে কোনো ধরণের লেবু যেমন রাখতে হবে ঠিক তেমনই তার সাথে পাকা পেঁপে,পেঁয়ারা,বেদানা,ফুটি,আপেল বা আরও মৌসুমী ফল যা যা আছে সবই খাওয়া যেতে পারে।
আমলকিও খুব ভালো একটি ভিটামিন সি রিচ সৌর্স, যা ইমিউনিটি সিস্টেমকেও বুস্টআপ করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
চা পাতাও আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যেমন গ্রীন টি বা ব্ল্যাক টি, এমনকি ওয়াইট টিও যদি এগুলোই আমরা তুলসী,মধু,দারচিনি,লবঙ্গ বা এলাচের সাথে খাই তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আরও বেড়ে যাবে।
রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জিঙ্কও খুব প্রয়োজন, যা আমরা পাই চিকেন,মাছ,বাদাম ও বাদাম জাতীয় তৈল বীজ থেকে, দুগ্ধজাত দ্রব্য থেকে এবং বিনস ও অন্যান্য ডাল জাতীয় খাবার থেকে।
যদিও আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেকটাই আমাদের প্রোটিন ইনটেকের উপর নির্ভর করে, তবুও প্লান্ট বেসড প্রোটিন আর এনিম্যাল প্রোটিনের মধ্যে ব্যালান্স রেখে খাওয়া ভালো।
ভিটামিন এ জাতীয় যেমন ক্যাপসিকাম, গাজর,মিষ্টি আলু বা রাঙা আলু এগুলো রাখা দরকার। ভিটামিন ই রিচ আলমন্ড,নারকেল,ব্রকোলি,পালং শাক এগুলোও রাখা দরকার। যদিও ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য সব ধরণের ভিটামিন রিচ খাবারই রাখা প্রয়োজন।
জিঙ্ক ছাড়াও সেলেনিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম আর পটাশিয়ামও আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয় যা আমরা ডিম,মাছ,সাজ সবজি,নাটস এবং অয়েল সিড্স,ফল,মাশরুম,মটরশুঁটি,শশা,মিষ্টি আলু ওগুলোও রাখা খুব প্রয়োজন।
যদিও ইমিউনিটি সিস্টেম আর নিউট্রিশনের সম্পর্ক বহু পুরোনো এবং আন্ডার রিসার্চ। এখনও অনেক কিছু সম্পর্কে আমাদের জানা বাকি।
২) শিশুদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে কিভাবে দূরে রাখা সম্ভব?
উত্তর- বর্তমান যুগে চাইল্ডহুড ওবেসিটি একটি বড় সমস্যা, যা প্রতিটি বাবা মায়ের চিন্তার অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমি এটা অবশ্যই বলবো যে- বাচ্চাদের খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই বদলে গেছে। আগেকার দিনের বাচ্চারা যেমন সাধারণ বাড়িরই খাবার খেতেই অভ্যস্ত ছিল।
এখন কিন্তু তা আর নেই।সেই জায়গায় হোটেল রেঁস্তোরার খাবার ঢুকেছে তাছাড়াও বাচ্চারা শাক সবজি,দুধ,মাছ খেতে অভ্যস্ত নয় তারা এখন পাস্তা,নুডুলস,নাগেটস,ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস,পিজা,বার্গার ইত্যাদি জাতীয় ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড খেতেই বেশি পছন্দ করে। এমনকি বাড়িতেও এসব জাতীয় খাবার খেতেই তারা পছন্দ করে। কিন্তু এইসব খাবার থেকে বাচ্চাদের যতটা দূরে রাখা যায় ততই তাদের পক্ষে ভালো। আর মা বাবা দের উচিত এসব জাতীয় খাবারের প্রতি বাচ্চার উৎসাহ তৈরী হতে না দেওয়া।

বাচ্চাদের বাড়ির সাহারণ ঘরোয়া খাবার দিন, যেমন-ডাল,রুটি,ভাত,মাছ,তরকারি,দই,ছানা ,দুধ এইসব খাবারের অভ্যেস করতে হবে। তবে অবস্যই তও সীমিত পরিমানে কারণ কোনো বাচ্চা যদি অত্যাধিক পরিমানে ভাত,রুটি,ডাল,মাছ,মাংস এসব খায় তাতে ওজন খুবই বৃদ্ধি পাবে তা জোটটি বাড়িরই রান্না হোক না কেন। আর ভাজা বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের অভ্যেসও কম করানো উচিত এবং নির্দিষ্ট মাপের তেল,নুন,চিনি ইত্যাদি ব্যবহার করে রান্না কর উচিত।
আর একটা কথা মাথায় রাখবেন শুধুমাত্র হেলথ ড্রিঙ্ক খাইয়েই কিন্তু বাচ্চাহদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। সাধারণের খাবারের মারফৎ বাচ্চা তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঠিক নিয়ে নেবে। বাচ্চাদের শরীরচর্চা করা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ব্যায়াম যোগাসন প্রাণায়াম বা খেলা ধুলোর মাধ্যমে যেন তার শারীরিক একটিভিটি বজায় থাকে তা নজর দিতে হবে।
আরও পড়ুন-লকডাউনে বাড়িতে থেকে ওজন বেড়ে যাচ্ছে? জেনে নিন ডায়েট করে কিভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেন(Is lockdown resulting your weightgain? Learn how to control weight by dieting)
৩) কোনো সাপ্লিমেন্ট খেয়ে কি ওজন কমানো উচিত?

উত্তর- এই ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে একটি ধারণা থাকা উচিত, না জেনে বুঝে কোনোরকম সাপ্লিমেন্ট নেওয়াকে আমি যুক্তি যুক্ত মনে করিনা।কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস আমরা যেটা থেকে পেয়ে থাকি সেটা হচ্ছে সাপ্লিমেন্ট। যেমন বডিবিল্ডার আর এথলেটিসদের প্ৰটিনের চাহিদা সাধারণ মানুষের থেকে বেশি হয়, আবার অনেকের শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে সেক্ষেত্রে আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হতে পারে।
তাই এইসব বিশেষ পরিস্থিতিতে সাপ্লিমেন্ট খুবই প্রয়োজনীয়।কিন্তু শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন কোনো বিশেষ সাপ্লিমেন্ট এর কথা আমি অন্তত বলতে পারবোনা। কারণ এর অনেক সাঈদ এফেক্টস থাকে সেটা খুবই বিপদজনক।
বহুক্ষেত্রে দেখা গেছে যারা শুধুমাত্র সাপ্লিমেন্ট খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করেছেন পরবর্তীকালে তাদের লিভার,কিডনি বা হার্ট এ নানান সমস্যা দেখা গেছে। বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে আলসারও হতে পারে। তাই সাপ্লিমেন্ট কখনোই নিজের ইচ্ছেতে খাওয়া শুরু করবেন না, বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে নিন তার আগে।
৪) ঠান্ডা জল খেলে কি ওজন বাড়তে পারে?
উত্তর- ঠান্ডা জল বা গরম জল নিয়ে অনেকরকম বৈপরীত্য আছে,অনেক রিপোর্টে এটা দেখা গেছে যে ঠান্ডা জল ওজন কমাতে সহজ করে আবার কিছু জায়গায় এটাও দেখা গেছে যে গরম জল শরীর থেকে অনেক টক্সিন বার করে দেয় , কিন্তু সঠিক উত্তর এখনো আমার জানা নেই। তবে জল খাবার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে সেগুলো মেনে চললে শরীর অবশ্যই সুস্থ্য থাকবে, যেমন-

তামার পাত্রে জল খাওয়া,
কখনোই দাঁড়িয়ে নয়,বসে স্থিরভাবে জল খাওয়া উচিত,
ঢক ঢক করে নোই চুমুক দিয়ে বা সিপ্ করে জল পান করা উচিত,
যেকোনো খাবার খাওয়ার আধঘন্টা আগে জল খাওয়া উচিত,
খাবার খাওয়ার মাঝে জল পান একদম উচিত নয় ,
খাবার আধঘন্টা পরে জল খাওয়া উচিত সঙ্গে সঙ্গে নয়।
৫) ডায়েট নিয়ে কিছু সচেতনতার বার্তা যদি দেন?
উত্তর- আমি সব সময় আমার পেশেন্টদের বলি যে- খাওয়াদাওয়াকে অবহেলা করবেন না,খুব হালকা ভাবেও নেবেন না আর প্যানিক ও করবেন না কি খাবো আর কি না খাবো এই ভেবে।
সাধারণ ঘরোয়া খাবার যা অবস্যই ব্যালান্সড হওয়া উচিত সেইদিকে খেয়াল রাখুন,
অবশ্যই নির্ভয়ে শাক সবজি বেই পরিমানে খান, পারলে নিজের বাড়িতেই অল্প জায়গার মধ্যে কিচেন গার্ডেন বানিয়ে নিন,
মাছ,মাংস,ডিম্ খান কিন্তু সীমিত পরিমানে,
অতি অবশ্যই ফল খান দিনে ১-টো,
ভাজা বা অত্যাধিক তেলমশলাযুক্ত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন,
খাবার সময় নির্দিষ্ট রাখুন অর্থাৎ একই সময়ে রোজ খাবার চেষ্টা করুন,
প্রতিটি ভারী খাবারের মধ্যে ৪ঘন্টার ব্যবধান রাখা জরুরি, ২ঘন্টা অন্তর ছোট স্নাক্স চলতে পারে,
মাঝেমধ্যে ফাস্টিং করাও ভালো তাতে শরীর সুস্থ থাকে, ১২-১৬ঘন্টার ব্যবধান থাকলে ভালো,
নিয়মিত শরীর চর্চা করুন তাহলে দেখবেন সর্রী একদম সুস্থ্য থাকবে আপনার।
কনসালট্যান্ট ডায়েটিশিয়ান মঞ্জিষ্ঠা রায়
দীর্ঘ ৬ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কনসালট্যান্ট ডায়েটিশিয়ান মঞ্জিষ্ঠা রায়, তিনি ফুড এন্ড নিউট্রিশন নিয়ে মাস্টার ডিগ্রী করেছেন। মঞ্জিষ্ঠা কলকাতার বিভিন্ন নামিদামি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যেমন S.S.K.M.(পি.জি) হাসপাতাল, চার্ণক হাসপাতাল ইত্যাদি। ডায়াবেটিকস নিয়ে C.M.C.(Vellore), তামিলনাড়ু থেকে তিনি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কল্যাণীর সুশ্রুত হাসপাতের সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন, ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ,পার্ক সার্কাসেও তিনি বহুদিন কাজ করেছেন, রানাঘাট Lions Diwalima Diagnostic Centre, নদিয়াতেও বেশ কিছুদিন তিনি যুক্ত থেকে কাজ করেছিলেন। ইন্ডিয়ান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন এর লাইফ মেম্বার ডায়েটিশিয়ান মঞ্জিষ্ঠা রায়। বর্তমানে তিনি Rainbow Clinic and Diagnostic Centre, নদিয়াতে যুক্ত রয়েছেন এবং বহু মানুষকে তার অভিজ্ঞতা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলছেন। Spark.Live এ এবার থেকে ডায়েটিশিয়ান মঞ্জিষ্ঠা রায় থাকছেন আপনাদের সকলের ডায়েট সম্পর্কিত যাবতীয় সমস্যার সমাধানের জন্যে।
Spark.Live এ কনসালট্যান্ট ডায়েটিশিয়ান মঞ্জিষ্ঠা রায়ের সঙ্গে অনলাইন কন্সালটেশনের জন্যে লিংকটিতে ক্লিক করুন-https://spark.live/consult/weight-management-for-immunity-diabetes-fatty-liver-hypertension-with-dietician-manjistha-roy-bengali